রাতের আঁধারে ধানমন্ডি মাঠ খনন
প্রোব নিউজ, ঢাকা: রাজধানীর ধানমন্ডি মাঠ রক্ষায় হাইকোর্টের নির্দেশ এবং এলাকাবাসীর প্রতিবাদ উপেক্ষা করে মাঠ জুড়ে চলছে খনন কাজ। রাতের আঁধারে স্ক্যাভেটরের আঘাতে দুর্বায় ঢাকা সবুজ মাঠের বুক এখন এবড়ো থেবড়ো। কিন্তু কে বা কারা এ খনন কাজ চালাচ্ছে তার দায়-দায়িত্ব স্বীকার করছেন না কেউই। শেখ জামাল ক্লাবের সভাপতি মঞ্জুর কাদের বলেছেন, ‘কে খনন করছে তা তার জানা নেই। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের দাবি বিষয়টি তাদেরও জানা নেই।
এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, প্রায় একসপ্তাহ ধরে রাতের আঁধারে মাঠ জুড়ে চলছে খনন কাজ। স্ক্যাভেটর দিয়ে মাঠের বুক চিড়ে তৈরি করা হয়েছে বড় বড় গর্ত। জড়ো করা হয়েছে মিক্সার মেশিন ও রড। মূল ফটকে তালা। বসানো হয়েছে পাহাড়াদার।বাইরের কাউকেই ঢুকতে দেয়া হচ্ছেনা ।
এদিকে মাঠ দখল করে এভাবে খনন কাজ চালানোকে বেআইনী বলে উল্লেখ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আইন কর্মকর্তা মো. মফিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘উন্মুক্ত উদ্যান ও জলাধার সংরক্ষণ আইনের বিধান মতে মাঠটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। এর পরও কেউ মাঠ দখল করলে তা বেআইনী’।আর এ কাজকে ¯্রফে দখলবাজি বলে উল্লেখ করেছেন ধানমন্ডি পরিবেশ উন্নয়ন জোটের কেন্দ্রীয় নেতা এবং বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সাবেক সভাপতি মোবাশ্বের হোসেন। তিনি বলেন, ‘রাজধানীতে নানা প্রক্রিয়া দলখবাজি চলছে। কেউ করছেন মসজিদ-মাদ্রাসার নামে। কেউ রাজনৈতিক দলের ব্যানারে। কিন্তু ধানমন্ডি মাঠটি দখল হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের নামে’।
তিনি আরো বলেন, ‘আইন অনুযায়ী মাঠটির মালিক ধানমন্ডির বাসিন্দারা হলেও বঙ্গবন্ধু পরিবারের নাম ভাঙ্গিয়ে বছরের পর বছর মাঠের ব্যবহার থেকে এলাকার ছেলে-মেয়েদেরকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শেখ জামাল ক্লাব লিমিটেডের ব্যানারে জনসাধারণের মাঠ দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে সামাজিক ক্লাব। এর আগে ২০১০ সালে শেখ জামাল ক্লাব কর্তৃপক্ষ একইভাবে নির্মাণ কাজ শুরু করলে এলাকাবাসী, নাগরিক, সামাজিক ও পরিবেশবাদি সংগঠনের প্রতিবাদের মুখে তা বন্ধ রাখা হয়।
আবার নতুন করে নির্মাণ কাজ শুরু হলেও রহস্যজনকভাবে নিশ্চুপ রয়েছে মাঠটির নিয়ন্ত্রক সংস্থা ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। মাঠটির দখল নিয়ে নোংরা রাজনীতি চলছে- এমন মন্তব্য করে দায়িত্ব শেষ করেছে সংস্থাটির সম্পত্তি বিভাগ।
এ প্রতিবেদকের কাছ থেকে মাঠে খনন কাজ চালানোর খবর শুনে সংস্থাটির অঞ্চল-১ এর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমরুল চৌধুরী যেন আকাশ থেকে পড়লেন। বিস্ময় প্রকাশ তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জানা নেই। তবে অঞ্চলের প্রকৌশল বিভাগ জেনে থাকতে পারেন।’
এ বিষয়ে অঞ্চল-১ এর নির্বাহী প্রোকৌশলী আবুল কালাম মোহাম্মদ আজাদ বলেন, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরশন ধানমন্ডি মাঠে কোন খনন কাজ চালাচ্ছে না।’
জানা গেছে, এ খেলার মাঠটি প্রথমে ধানমন্ডি ক্লাবের নামে দখলের তৎপরতা শুরু হলে ২০০৪ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট হাইকোর্টে রিট করে। সংগঠন দুটির করা ওই রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত মাঠটি রক্ষায় ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে নির্দেশ দেন। এর পর ২০১০ সালে ধানমন্ডি ক্লাবের নাম পরিবর্তন করে লে. শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব লিমিটেড করা হয়। ২০১১ সালের ১৫ মার্চ ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে ধানমন্ডি খেলার মাঠ থেকে সব অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করে সবার জন্য উন্মুক্ত রাখার আদেশ দেন উচ্চ আদালত। কিন্তু চার বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি আদালতের সেই নির্দেশনা।
এ প্রসঙ্গে বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, এটি আদালত অবমাননার জঘন্য উদাহরণ। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে রাষ্ট্র যে ব্যর্থ হয়েছে তারও প্রকৃষ্ট উদাহরণ এটি।
জানা গেছে, শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব লিমিটেড মাঠের অর্ধেক জুড়ে ৬ তলা বিশিষ্ট কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। এ ভবনে থাকবে আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং, ক্যান্টিন, খেলোয়ারদের জন্য ডরমেটোরি, অডিটোরিয়াম, কনফারেন্স রুম, পরিচালকদের বোর্ড রুম, টেবিল টেনিস খেলার ব্যবস্থা। এছাড়াও কমপ্লেক্স ভবনের পাশে নির্মাণ করা হবে ব্যাডমিন্টন ও লন টেনিস কোর্ট। সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য নির্মিতব্য অডিটোরিয়াম ভাড়ায় করতে পারবে যে কেউ। বর্তমানে মাঠের দক্ষিণ পাশে একটি মাত্র গেট রয়েছে। ভবন নির্মিত হলে পশ্চিম ও উত্তর পাশে আরো দুটি গেট বানানো হবে।
এলাকাবাসীর আশঙ্কা, এ ধরনের ভবন নির্মিত হলে স্থানীয়রা কেবল খেলাধূলার সুযোগ থেকেই বঞ্চিত হবেন না, এ এলাকার আবাসিক বৈশিষ্ট্যও বিনষ্ট হবে।
প্রোব/শর/জাতীয়/ ২৪মার্চ ২০১৪