বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার হাজারিবাগ এলাকার মানুষ, পানি, মাটি ও বাতাস সবকিছুই বিষে আক্রান্ত। আর যারা ট্যানারিতে কাজ করছেন তারা আক্রান্ত হচ্ছেন নানা জটিল রোগে। রানাপ্লাজা ধসের পর পোশাক কারখানাসহ শিল্প কারখানায় শ্রমিক নিরাপত্তা এবং কাজের পরিবেশ উন্নয়নের জন্য কথা হলেও হাজারিবাগের ট্যানারিতে তার কোন প্রভাব নেই। পরিবেশ আন্দোলনকারীরা বলছেন এই বিষাক্ত জনপদ থেকে পরিবেশ ও জীবন বাঁচাতে চামড়া কারখানা সরিয়ে নেয়ার কোন বিকল্প নেই।
হাজারিবাগে মোট ট্যানারির সংখ্যা কম-বেশি ২০০। আর এখানে কাজ করেন ২৫ হাজার শ্রমিক। এইসব চামড়া কারখানায় কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাত করা হয়। আর তাতে ব্যবহার করা হয় খার এবং এ্যাসিড। শ্রমিকরা কোন ধরণের নিরাপত্তা ছাড়াই খালি হাতে, খালি পায়ে এই প্রক্রিয়াজাতের কাজ করেন। ফলে তারা ক্যান্সার ও চর্মরোগসহ নানা ধরণের রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ট্যানারির একজন কর্মচারী মোহাম্মদ আলম জানান, তিনি ৫ বছর ধরে কাজ করছেন। এখন তিনি চর্মরোগ এবং শ্বাস কষ্টে ভুগছেন। তিনি জানান তার বেতনও কম। আর চিকিৎসার জন্য বাড়তি কোন টাকাও দেয়না প্রতিষ্ঠান।এভাবে আরো অনেক ট্যানারি শ্রমিক জটিল রোগে আক্রান্ত। আর তাদের বেতন মাসে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। তারা জানেন ট্যানারিতে ব্যবহৃত ক্রোমিয়াম তাদের ক্ষতি করছে। কিন্তু আর কোন কাজ না থাকায় তারা বাধ্য হয়েই এখানে আছেন।
হাজারিবাগের ট্যানারিগুলো থেকে প্রতিদিন গড়ে ২২ হাজার কিউবিক লিটার বিষাক্ত বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ে। আর তা দূষিত করে বুড়িগঙ্গার পানি, হাজারিবাগের মাটি ও বায়ু। তার প্রভাব পড়ে ট্যানারির শ্রমিক ছাড়াও ঐ এলাকার বাসিন্দাদের ওপর। হাজারিবাগ এলাকা খুবই ঘনবসতিপূর্ন এবং সেখানে ২০ লাখেরও বেশি মানুষ বসবাস করেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপার মুখপাত্র ইকবাল হাবিব প্রোব নিউজকে বলেন, শুধু ট্যানারি নয়, তাদের কেন্দ্র করে ছোট ছোট আরো অনেক অপরিকল্পিত কারখানা গড়ে উঠেছে। আর সেসব কারখানায় ট্যানারি কঠিন বর্র্জ্য যেমন: টুকরো চামড়া, গরুর হাড়, চর্বি, দাঁত এগুলো পুড়িয়ে পোল্ট্রি ফিডসহ আরো নানা জিনিস তৈরি করা হয়। আর এসব কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া পুরো এলাকাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। তিনি জানান, ট্যানারি এবং এইসব ছোট ছোট কারখানার কারণে পুরো হাজারিবাগ এলাকার মানুষ,মাটি, পানি এবং বাতাস এখন বিষে আক্রান্ত। ইকবাল হাবিব বলেন, এরসঙ্গে পরিবেশ ও বুড়িগঙ্গাও বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। কিন্তু এসব কারখানার পরিবেশ, শ্রমিক নিরাপত্তা নিয়ে কেউ কথা বলছেনা।
এই জীবন ও পরিবেশের ক্ষতি করে এই ট্যানারির ব্যবসা ফুলে উঠছে। তারা শ্রমিকদের ঝুঁকির মধ্যে কাজ করালেও মজুরী দেয় কম এবং চিকিৎসার কোন ব্যবস্থা করেনা। গত ৬ মাসে তাদের রপ্তানি বেড়েছে ৩৫ ভাগ। ইকবাল হাবিব বলেন, বিদেশি ক্রেতাদের টানারির পরিবেশ নিয়ে কথা বলা উচিত। আর সরকারের উচিত খুব দ্রুত সাভারে নির্ধারিত জায়গায় ট্যানারি স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়া।
প্রোব/হার/জাতীয়/০৪.০৪.২০১৪