গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা
রপ্তানি বাড়াতে পণ্যের বহুমুখীকরন ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে
প্রোবনিউজ, ঢাকা : বাংলাদেশী পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন, পণ্যের বহুমুখীকরণ ও বাজার সম্প্রসারণ, সঠিক তথ্য প্রবাহ বৃদ্ধি, বাজার মূল্যায়ন, বন্দর শক্তিশালীকরণের বিষয়টি আরও নিশ্চিত করার পরামর্শও দিয়েছেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কনস্যুলাররা।
শনিবার দুপুরে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) মিলনায়তনে “রপ্তানি সমৃদ্ধি : আমদানিকারক দেশের প্রেক্ষিত” বিষয়ক গোলটেবিল আলোচনায় তারা এ পরামর্শ দেন। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে ডিসিসিআই।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত ও কনস্যুলাররা তাদের দেশের বাণিজ্যের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তাদের দেশের বিনিয়োগের পরিবেশ নিয়ে আলোচনা করেন। বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিষয় নিয়ে বিভিন্ন খাতে সমস্যার কথা উল্লেখ করেন।
ডিসিসিআই সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান খানের সভাপতিত্বে আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন, ইরাকের রাষ্ট্রদূত শাকির কোয়াসিম মাহদি, শ্রীলংকার রাষ্ট্রদূত ডাব্লিউ এ সারাত কে ওয়ারাগোদা, তুরস্কের বাণিজ্যিক কনস্যুলার টালি ইউয়ানিক, অস্ট্রেলিয়ার ট্রেড কমিশনের বাংলাদেশস্থ ব্যবস্থাপক মিনহাজ চৌধুরী, দক্ষিণ কোরিয়ার বাংলাদেশস্থ ব্যবস্থাপক ফারুক আহমেদসহ অন্যরা।
অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তৃতায় ডিসিসিআই সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান খান বাংলাদেশী পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ এবং পণ্যের বহুমুখীকরনের জন্য দূতাবাসসমূহকে এগিয়ে আসার সহযোগিতার আহবান জানান।
তিনি বলেন, রপ্তানি বাড়ানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ঐতিহ্যগত পণ্যেগুলোর পাশাপাশি নতুন নতুন পণ্যের দিকে দৃষ্টি দিচ্ছে। তিনি বাংলাদেশী পণ্যের রপ্তানী বৃদ্ধির জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আরো বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ, রপ্তানি বাণিজ্যে সার্ভিস সেক্টরের অন্তর্ভুক্তিকরন, বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশী পণ্যের রপ্তানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান ট্যারিফ ও নন-ট্যারিফ সংশ্লিষ্ট সমস্যা সমাধান পদক্ষেপ গ্রহণ, দক্ষ মানব সম্পদ তৈরী এবং ডব্লিউটিও-এর মত বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক সংস্থার নিকট প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি সমূহ বাস্তবায়নের আহবান জানান।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ইরাকের রাষ্ট্রদূত সাকির কাসিম মাহাদি বলেন, বাংলাদেশ ও ইরাকের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলেও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পায়নি। দুদেশের মধ্যকার বাণিজ্য সম্পর্ক আরও বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, ২০১৪ সালের জন্য ইরাকে প্রায় ১৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে, যার ৪০ ভাগ ব্যয় করা হবে নতুন বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করার জন্য।
তিনি জানান, তৈরী পোশাক, সিরামিক, ঔষধ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এবং তথ্য-প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা ইরাকে বিনিয়োগ করতে পারেন। এবং বিশেষ করে ইরাকে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের আহবান জানান। ইরাকে প্রচুর বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করছে এবং এ কাজে নিয়োজিত লোকের সংখ্যা আরো বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।
শ্রীলংকার হাইকমিশনার ডব্লিউ এ সারাথ কে ওয়ারাগোদা বলেন, বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার মধ্যকার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি অথবা সম্ভাবনাময় বাণিজ্য চুক্তির বিষয়টি বর্তমানে আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। তিনি জানান, ২০১২ সালে বাংলাদেশে শ্রীলংকার রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ২২ শতাংশ এবং আমদানি বেড়েছে ৯ শতাংশ। শ্রীলংকার সরকার কর ব্যবস্থাকে আরো সরলীকরন করেছে।
তিনি জানান, বাংলাদেশের সমুদ্র পরিবহনের ১৬ ভাগই হয়ে থাকে শ্রীলংকার সমুদ্রবন্দর সমূহের মাধ্যমে। তিনি আরো ব্যাপক ভাবে শ্রীলংকা সমুদ্র বন্দর সমূহ ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের আহবান জানান। তিনি জানান, ২০১২ সালে বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা মধ্যে ব্যালেন্স অফ ট্রেড (ইধষধহপব ড়ভ ঞৎধফব) ছিল ৩০ দশমিক ১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
কোরিয়ান ট্রেড সেন্টার’র (কট্রো) সিনিয়র ম্যানেজার ফারুক আহমেদ বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া সারা বিশ্বের মধ্যে ৭ম বৃহত্তম আমদানিকারক দেশ। ২০১২ সালে দক্ষিণ কোরিয়া সারা বিশ্ব থেকে ৫১৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে। তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে ৯৫ টি পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে থাকে। বাংলাদেশের তৈরী পোশাক এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার বাজারে। তিনি বাংলাদেশি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে বাংলাদেশি মিশন সমূহের দক্ষতা ও কার্যক্রম আরো ব্যাপকতর করার আহবান জানান।
বাংলাদেশস্থ তুরষ্ক দূতাবাসের বিজনেস কাউন্সিলর টুলে ইয়ানিক বলেন, তুরষ্ক প্রতিবছর তৈরী পোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্য, চমড়া ও চামড়াজাত পণ্য এবং সিরামিক প্রভৃতি পণ্য প্রচুর পরিমাণে আমদানি করে থাকে। তিনি বাংলাদেশী পণ্যের বাজার সম্প্রসারণের জন্য পণ্যের বহুমুখীকরন, উৎপাদনের দক্ষতা বৃদ্ধি, ব্যাংকিং খাত ও যোগাযোগ খাতের আধুনিকায়ন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীতকরন এবং শ্রমিক অধিকার নিশ্চিতকরনের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
অস্ট্রেলিয়ান দূতাবাসের অস্ট্রেলিয়ান ট্রেড কমিশনের কান্ট্রি ম্যানেজার মিনহাজ চৌধুরী বলেন, ২০০৪ সাল থেকে বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়ার বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করছে এবং ২০১২-১৩ সালে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ থেকে যথাক্রমে ৫ লাখ৭২ হাজার ৫’শ ৫ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি ও ৪লাখ ১৮ হাজার ৯’শ ৩৩ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার আমদানি করেছে। তিনি জানান, অস্ট্রেলিয়ার বাজারে বিদেশী নতুন সরবরাহকারীদের ব্যবসা পরিচালনার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
প্রোব/আরএম/মুআ/অর্থনীতি ১০.০৫.১৪