বাধন অধিকারী, প্রোবনিউজ: বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল ল ইয়ার্স এ্যাসোসিয়েশন (বেলা)-র পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী আবু বকর সিদ্দিকের অপহরণের ঘটনায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে ফেইসবুক-সহ বিভিন্ন ধারার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। শান্তি-গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার সুরক্ষায় কাজ করেন; এমন অ্যাকটিভিস্টদের ফেইসবুক পাতায় কখনও স্ট্যাটাস হয়ে, কখনও নোট হয়ে, কখনওবা আবার ইভেন্ট হয়ে জায়গা করে নিয়েছে এই ঘটনা।
উদ্বিগ্ন নাগরিকদের পক্ষে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ও অধ্যাপক আহমেদ কামাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সমাবেশ আহবান করে ফেইসবুকে একটি ইভেন্ট করেছেন। বিশিষ্ট বামপন্থী সংগঠক ওমর তারেক চৌধুরী তার ফেইসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “এই গুম-খুন-অপহরণ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ধারাবাহিকভাবে, পরিকল্পিতভাবে, এটি পরিচালিত হচ্ছে একটি ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের উদ্দেশ্যে। মানুষকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে, সামাজিক-রাজনৈতিক তৎপরতা থেকে বিরত রাখার কৌশল হিসেবে।” কেবল আবু বকর নয়, যাবতীয় গুম-খুন এবং অবিচারিক হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে দল-মত নির্বিশেষে মানবাধিকার রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
আবু বকরের অপহরণ নিয়ে ফেইসবুকে নোট লিখেছেন লেখক-সংস্কৃতিকর্মী এবং গায়ক অরূপ রাহী। “রিজওয়ানা আপা সামনে থাকলে এই লাইন বলতে বা লিখতে পারতাম না। আবু বকর সিদ্দিক ফিরে আসবেন এই আশা করতে পারলে ভাল হত। কিন্তু মন বলে অন্য কথা। যুগের পর যুগ রাষ্ট্রের গণবিরোধী চরিত্র দেখতে দেখতে আর ভাল কিছু আশা করা সত্যি কঠিন, দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে। তবু, যদি ফিরে আসতেন আবু বকর সিদ্দিক!” অরূপ রাহীর মন্তব্য, এটা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাশক্তির কাজ হোক অথবা বাইরের কারও কাজ হোক; ঘটনার দায়দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কেননা রাষ্ট্র নিশ্চুপ বলেই এই ঘটনাগুলো ঘটতে পারছে।
পরিবেশ এবং কৃষি নিয়ে কাজ করেন হাসান মোর্শেদ। তিনি মনে করেন, রিজওয়ানার পরিবেশবাদী তৎপরতায় ক্ষুব্ধ হয়ে ক্ষমতাশালীদের কেউ এই অপহরণে জড়িত। নিজের ফেইসবুক স্ট্যাটাসে হাসান প্রশ্ন তুলেছেন, “জাফলং, ভোলাগঞ্জ, লালাখাল, রাতারগুল- যে কোন একটাকে কেইসস্টাডি হিসাবে নিলেই দেখা মেলে- গোপনে ও প্রকাশ্যে কতো যে ইন্টারেস্ট গ্রুপ জড়িত থাকে। এরা ওয়ার্ড পর্যায় থেকে রাষ্ট্রের সর্ব্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত প্রশ্রয় পায় কারন ভাগবাটোয়ারা সব পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে। রিজওয়ানা আপার মতো ওয়েল লিংকড, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একজন পরিবেশকর্মীকে যদি তার কাজের জন্য এরকম ব্যক্তিগত দায় শোধ করতে হয়, তাহলে মাঠপর্যায়ে যারা কাজ করেন- তাদের জন্য কী পরিনতি অপেক্ষা করছে?”
ফেসইবুকে নিজের স্ট্যাটাসে সরকারকে সতর্ক করেছেন জনপ্রিয় লেখক এবং পাক্ষিক পত্রিকা একপক্ষের সম্পাদক মাসুদা ভাট্টি। তিনি লিখেছেন, “গুম কিংবা অপহরণ সরকারকেতো দুর্বল করেই, রাষ্ট্রকেও করে দিচ্ছে দুর্বলতর!!! সরকার এই বিষয়গুলি সিরিয়াসলি না নিলে অল্পকালের মধ্যেই ঘনীভূত হবে নতুন বিপদ।”
সাংবাদিক-কলামিস্ট ফারুক ওয়াসিফ তার ফেইসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “রিজওয়ানা হাসানের স্বামীকে স্ত্রীর অ্যাক্টিভিজমের জন্য 'উধাও' করার আশংকা বাতিল করা যায় না। রূপকথার রাক্ষসকে প্রতিদিন একটি করে মানুষ ভক্ষণের জন্য দিতে হতো। অব্যাহত গুম, অপহরণ কোন রাক্ষসের ক্ষুধা মেটাতে চলছে এই প্রশ্ন যদি সরকারের কাছে না করেন, তাহলে আপনি নৈ রাষ্ট্রের নৈ নাগরিক। এটাই চলবে? প্রশ্ন করুন, দেশে কি সরকার আছে? জানতে চান আমিই কি পরের জন? আপনিই কি পরের টার্গেট? যত এই প্রশ্ন উঠবে তত জীবন নিরাপদ হবে এদেশে। শুনতে পাচ্ছেন দেশের বুকে আর্তনাদ উঠছে: সেইভ আওয়ার সৌল্স!”
এর বাইরেও আবু বকরের অপহরণকে ঘিরে ফেইসবুক-টুইট্যারে নিজেদের শঙ্কা আর অনুভূতির কথা জানিয়েছেন অনেকেই।
প্রোব/বান/জাতীয় ১৫.০৪.২০১৪