প্রোব নিউজ, ঢাকা: রাশিয়ার সঙ্গে ক্রিমিয়ার একীভূত হওয়ার বিরোধিতা করে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে আনা প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত থাকায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশ্বাসহীনতার দিকে আরো একধাপ এগিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এর মাধ্যমে ভারত-রাশিয়ার শিবিরে বাংলাদেশের প্রবেশ আরো স্পষ্ট হলো। দেশের অর্থনীতিতে এর দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব পরতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন তারা। যদিও সরকার পক্ষ বলছে, ইস্যুটি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান হোক এটাই চাচ্ছে বাংলাদেশ।
জানা গেছে, শুক্রবার রাশিয়ার সঙ্গে ক্রিমিয়ার একীভূত হওয়াকে স্বীকৃতি না দিতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে একটি প্রস্তাব আনা হয়। প্রস্তাবের পক্ষে ১০০টি দেশ এবং বিপক্ষে ১১টি দেশ ভোট দেয়। ভোটদানে বিরত থাকে ভারত, চীন ও বাংলাদেশসহ ৫৮টি দেশ।
এদিকে ভোটদানে বিরত থাকার ইস্যুতে ইতিমধ্যে আমেরিকা-রাশিয়া এই দুই পরাশক্তির বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। কারো দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে ভোটদানে বিরত থাকায় বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার নিকোলায়েভ।
রোববার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) আয়োজিত দেশভিত্তিক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে এ ধন্যবাদ জানালেও ঠিক এর পরের দিনই বিষয়টিকে দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজীনা। সোমবার বিকেলে ঢাকায় আমেরিকান ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিং-এ ড্যান ডব্লিউ মজিনা বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে ক্রিমিয়ার একীভূত হওয়াকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মেনে নেয়নি। জাতিসংঘের ওই প্রস্তাবে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এই ইস্যুটিতে বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের যুক্ত হতে না পারাটা দুঃখজনক।আর এই ভোটদানে বিরত থাকা প্রকারান্তরে রাশিয়ার আগ্রাসনকেই সমর্থন দেয়ার শামিল বলে উল্লেখ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান।
তিনি বলেন, বর্তমান যুগে কোন দেশেরই আগ্রাসন কাম্য নয়। কিন্তু ক্রিমিয়ার ক্ষেত্রে রাশিয়া সেই কাজটি করলেও বাংলাদেশ সরাসরি এর বিরুদ্ধে ভোট দেয়নি। এতে ভারত-রাশিয়ার শিবিরে বাংলাদেশের প্রবেশ আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ফলে পশ্চিমা বিশ্ব সম্পর্কটিকে হয়তো সন্দেহের চোখেই দেখবে।
আর এই সন্দেহের প্রভাব দীর্ঘ মেয়াদে এদেশের অর্থনীতিতে
পরতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশী পণ্যের বড় বাজার পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোতে। সেক্ষেত্রে অবিশ্বাস ও সন্দেহের কারণে বাজারের ব্যাপ্তি না বেড়ে যদি ছোট হয়ে আসতে থাকে, তবে দীর্ঘ মেয়াদে তার প্রভাব অর্থনীতিতে পড়বেই।
বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের জিএসপি সুবিধা আরো ঝুলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমান।
যদিও জিএসপি ইস্যুতে একই বক্তব্য উঠে এসেছে মজীনার কন্ঠে। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ জিএসপি সুবিধা ফিরে পাবেই এ গ্যারান্টি আমি দিতে পারছি না। তবে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে চাই বলেই আমার প্রত্যাশা বাংলাদেশ এ সুবিধা ফিরে পাক। যাতে এদেশের পোশাক বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ড হতে পারে।
এদিকে ক্রিমিয়া নিয়ে জাতিসংঘের ভোটাভুটির ইস্যুতে সম্পর্কহীনতার সব ধরনের আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ জমির। তিনি বলেন, একমাত্র বাংলাদেশই ভোট দানে বিরত থাকেনি। বিশ্বের আরো অনেক দেশ এ তালিকায় রয়েছে। তবে বাংলাদেশ চাইছে ক্রিমিয়ার ইস্যুটি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান হোক। কিন্তু সেই চাওয়াটা কত দক্ষতার সঙ্গে সরকার বুঝাতে পারবে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অধ্যাপক ইমতিয়াজ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অবস্থানটা যুক্তরাষ্ট্রকে সরকার বুঝাতে পেরেছে কিনা বা যুক্তরাষ্ট্র কতটুকু বুঝবে সেটাও দেখার বিষয়।
প্রোব/শর/জাতীয়/ ১ এপ্রিল ২০১৪